October 13, 2025

দুপুরের খাবার না খেলে শরীরে যে প্রভাব পড়ে


সংস্থা: কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই সময়মতো দুপুরের খাবার খেতে পারেন না বা ইচ্ছাকৃতভাবে তা বাদ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার ডায়েটের জন্যও দুপুরের খাবার এড়িয়ে যান। মাঝে মাঝে খাবার না খাওয়া কিছুটা উপকার দিতে পারে, তবে নিয়মিত দুপুরের খাবার বাদ দিলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নিজেকে ফিট রাখতে বা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কেউ কেউ নিয়মিত দুপুরের খাবার বাদ দেন। তবে এভাবে খাবার এড়িয়ে চলার ফলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তা অনেকেই জানেন না। ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম এই বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। চলুন, জেনে নিই দুপুরে খাবার না খাওয়ার ফলে শরীরে কী পরিবর্তন ঘটে।

রক্তে শর্করার মাত্রা উঠানামা করা:

দুপুরে খাবার খাওয়া বাদ দিলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ঘাম, কাঁপুনি, এমনকি জ্ঞান হারানোর আশঙ্কাও দেখা দেয়। আবার এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এর প্রভাবে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বিপাক ধীর হওয়া:

দুপুরে না খেলে শরীর শক্তি হারাতে থাকে এবং বিপাক ধীর হয়। এ কারণে শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষমতা কমে। ওজন বাড়তে থাকে। শরীর তখন সারভাইভাল মোডে চলে যায়।

বেশি খাওয়ার প্রবণতা:

দুপুরে না খাওয়ার কারণে সন্ধ্যা বা রাতে অনেক বেশি ক্ষুধা পায় এবং তখন অল্প সময়ে অনেক বেশি খাবার খাওয়া হয়। এ কারণে ওজন বৃদ্ধিসহ গ্যাস-অ্যাসিডিটি ও বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পুষ্টির ঘাটতি:

দুপুরে খাবার বন্ধ করার কারণে ফাইবার, আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন বি১২ ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয় শরীর। ফলে চুল পড়া, ত্বক রুক্ষ হওয়া, ক্লান্তি বোধ হওয়া এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া:

জিঙ্ক, ভিটামিন সি ও প্রোটিনের ঘাটতি থেকে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এ কারণে ভাইরাল সংক্রমণ, ঠান্ডা-কাশি, এমনকি গ্যাসট্রো-ইনফেকশন পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হজমের সমস্যা:

দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমা হয়। যা অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বুক জ্বালা, গ্যাসট্রিক, গ্যাস্ট্রাইটিস এবং অনেক সময় আলসারের মতো জটিল সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে।

হৃদরোগের ঝুঁকি:

দুপুরে খাবার না খাওয়ার কারণে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ কম-বেশি হতে পারে। আর এমনটা চলতে থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকে অনেকাংশে বেড়ে যায়।

সমাধান:

প্রতিদিন দুপুরের খাবার সময়মত খেতে হবে। প্রোটিন, ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর চর্বি রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। সময় কম থাকলে স্যুপ, ফল বা স্যান্ডউইচজাতীয় হালকা পুষ্টিকর খাবার খেয়ে নিন। চাইলে আগে থেকে খাবার নিয়ে পরিকল্পনা করে রাখুন। আর ওজন কমাতে খাবার এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং প্রোটিন কনট্রোল ও সঠিক টাইমিং অনুসরণ করুন।

মনে রাখতে হবে, নিয়মিত দুপুরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দেয়া সাধারণ বিষয় মনে হলেও এটি ধীরে ধীরে আপনার শরীরের ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে। হজমশক্তি থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্র, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রভাবিত হয়। এ জন্য সচেতন হয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর উপাদানে দুপুরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *